1. তখন দেশে ভীষণ দুর্ভিক্ষ চলছিলো।
2. আর তাঁরা মিসর দেশ থেকে যে শস্য এনেছিলেন, সেই সমস্ত খাওয়া শেষ হলে তাঁদের পিতা তাঁদেরকে বললেন, তোমরা আবার যাও, আমাদের জন্য কিছু খাদ্যশস্য ক্রয় করে আন।
3. তখন এহুদা তাঁকে বললেন, সেই ব্যক্তি দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করে আমাদেরকে বলেছেন, তোমাদের ভাই তোমাদের সঙ্গে না আসলে তোমরা আমার মুখ দেখতে পাবে না।
4. যদি তুমি আমাদের সঙ্গে আমাদের ভাইকে পাঠাও, তবে আমরা গিয়ে তোমার জন্য খাদ্যশস্য ক্রয় করে আনবো।
5. কিন্তু যদি না পাঠাও তবে যাব না; কেননা সেই ব্যক্তি আমাদেরকে বলেছেন, তোমাদের ভাই তোমাদের সঙ্গে না আসলে তোমরা আমার মুখ দেখতে পাবে না।
6. তখন ইসরাইল বললেন, তোমরা আমার সঙ্গে কেন এমন খারাপ আচরণ করলে? ঐ ব্যক্তিকে কেন বলেছো যে, তোমাদের আর এক ভাই আছে?
7. তাঁরা বললেন, তিনি আমাদের বিষয়ে ও আমাদের বংশের বিষয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে জিজ্ঞাসা করলেন, বললেন, তোমাদের পিতা কি এখনও জীবিত আছেন? তোমাদের কি আরও ভাই আছে? তাতে আমরা সেই কথা অনুসারে উত্তর দিয়েছিলাম। আমরা কেমন করে জানবো যে, তিনি বলবেন, তোমাদের ভাইকে এখানে নিয়ে এসো?
8. এহুদা তাঁর পিতা ইসরাইলকে আরও বললেন, বালকটিকে আমার সঙ্গে পাঠিয়ে দাও; আমরা প্রস্থান করি, তাতে তুমি ও আমাদের ছেলেমেয়েরা এবং আমরা বাঁচবো, কেউ মরবো না।
9. আমিই তার জামিন হলাম, আমারই হাত থেকে তাকে নিও, আমি যদি তোমার কাছে তাকে না আনি, তোমার সম্মুখে তাকে উপস্থিত না করি, তবে আমি সারা জীবন তোমার কাছে অপরাধী থাকব।
10. এত বিলম্ব না করলে আমরা এর মধ্যে দ্বিতীয়বার ফিরে আসতে পারতাম।
11. তখন তাঁদের পিতা ইসরাইল তাঁদেরকে বললেন, যদি তা-ই হয় তবে এক কাজ করো; তোমরা নিজ নিজ থলিতে এই দেশের উৎকৃষ্ট দ্রব্য— গুগ্গুল, মধু, সুগন্ধি দ্রব্য, গন্ধরস, পেস্তা ও বাদাম কিছু কিছু নিয়ে গিয়ে সেই ব্যক্তিকে উপহার দাও।
12. আর নিজ নিজ হাতে দ্বিগুণ টাকা নাও এবং তোমাদের বস্তার মুখে যে টাকা ফিরে এসেছে, তাও হাতে করে পুনরায় নিয়ে যাও; কি জানি, হয়তোবা তাদের ভুল হয়েছিল।
13. আর তোমাদের ভাইকে নিয়ে যাও, উঠ, পুনর্বার সেই ব্যক্তির কাছে যাও।
14. সর্বশক্তিমান আল্লাহ্ তোমাদেরকে সেই ব্যক্তির কাছে করুণার পাত্র করুন, যেন তিনি তোমাদের অন্য ভাইকে ও বিন্-ইয়ামীনকে ছেড়ে দেন। আর যদি আমাকে পুত্রহীন হতে হয়, তবে পুত্রহীন হলাম।
15. তখন তারা সেই উপহারের জিনিস নিলেন, আর হাতে দ্বিগুণ টাকা ও বিন্ইয়ামীনকে নিয়ে যাত্রা করলেন এবং মিসরে গিয়ে ইউসুফের সম্মুখে দাঁড়ালেন।
16. ইউসুফ তাঁদের সঙ্গে বিন্ইয়ামীনকে দেখে নিজের বাড়ির তত্ত্বাবধায়ককে বললেন, এই কয়েকজন লোককে বাড়ির ভিতরে নিয়ে যাও, আর পশু মেরে আয়োজন করো; কেননা এরা মধ্যাহ্নে আমার সঙ্গে আহার করবে।
17. তাতে সেই ব্যক্তি, ইউসুফ যেমন বললেন, সেরকম করলো, তাঁদেরকে ইউসুফের বাড়িতে নিয়ে গেলেন।
18. কিন্তু ইউসুফের বাড়িতে নিয়ে যাওয়াতে তাঁরা ভয় পেলেন ও পরস্পর বললেন, আগে আমাদের বস্তায় যে টাকা ফিরে গিয়েছিল তার জন্যই ইনি আমাদেরকে এখানে এনেছেন; এখন আমাদের আক্রমণ করবেন ও আমাদের গাধাগুলো কেড়ে নিয়ে আমাদেরকে গোলাম করে রাখবেন।
19. অতএব তাঁরা ইউসুফের বাড়ির তত্ত্বাবধায়কের কাছে গিয়ে বাড়ির দরজার কাছে তার সঙ্গে কথা বললেন,
20. বললেন, হুজুর, আমরা আগে খাদ্যশস্য কিনতে এসেছিলাম;
21. পরে পান্থনিবাসে গিয়ে নিজ নিজ বস্তা খুললাম, আর দেখুন, প্রত্যেক জনের বস্তার মুখে তার টাকা, ঠিক পরিমাণেই আমাদের টাকা আছে; পুনরায় তা আমরা নিয়ে এসেছি।
22. এবার খাদ্যশস্য কিনবার জন্য আরও টাকা এনেছি; আমাদের সেই টাকা আমাদের ছালায় কে রেখেছিল, তা আমরা জানি না।
23. সেই ব্যক্তি বললো, তোমাদের মঙ্গল হোক, ভয় করো না; তোমাদের আল্লাহ্, তোমাদের পূর্বপুরুষদের আল্লাহ্, তোমাদের বস্তায় তোমাদেরকে গুপ্তধন দিয়েছেন; আমি তোমাদের টাকা পেয়েছি। পরে সে শিমিয়োনকে তাঁদের কাছে আনলো।
24. আর সে তাঁদেরকে ইউসুফের বাড়ির ভিতরে নিয়ে গিয়ে পানি দিল, তাতে তাঁরা পা ধুলেন এবং সে তাঁদের গাধাগুলোকে আহার দিল।
25. আর মধ্যাহ্নে ইউসুফ আসবেন বলে তাঁরা উপহার সাজালেন, কেননা তাঁরা শুনেছিলেন যে, সেখানে তাঁদেরকে আহার করতে হবে।
26. পরে ইউসুফ বাড়িতে আসলে তাঁরা তাদের উপহার বাড়ির মধ্যে তাঁর কাছে আনলেন ও তাঁর সামনে ভূমিতে উবুড় হয়ে সম্মান দেখালেন।
27. তখন তিনি কুশল জিজ্ঞাসা করে তাঁদেরকে বললেন, তোমাদের যে বৃদ্ধ পিতার কথা বলেছিলে, তিনি কি কুশলে আছেন? তিনি কি এখনও জীবিত আছেন?
28. তাঁরা বললেন, আপনার গোলাম আমাদের পিতা সহিসালামতে আছেন, তিনি এখনও জীবিত আছেন। পরে তাঁরা ভূমিতে উবুড় হয়ে সম্মান দেখালেন।
29. তখন ইউসুফ তাঁর ভাই বিন্ইয়ামীনকে, তাঁর সহোদরকে দেখে বললেন, তোমাদের যে ছোট ভাইয়ের কথা আমাকে বলেছিলে, সে কি এই? আর তিনি বললেন, বৎস, আল্লাহ্ তোমার প্রতি অনুগ্রহ করুন।
30. তখন ইউসুফ তাড়াতাড়ি করলেন, কেননা তাঁর ভাইয়ের জন্য তাঁর প্রাণ কাঁদছিল, তাই তিনি কাঁদবার জায়গার খোঁজ করলেন, আর নিজের কামরায় প্রবেশ করে সেখানে কাঁদতে লাগলেন।
31. পরে তিনি মুখ ধুয়ে বাইরে আসলেন ও নিজেকে সংযত করে খাদ্য পরিবেশন করতে হুকুম করলেন।
32. তখন তাঁর জন্য পৃথক ও তাঁর ভাইদের জন্য পৃথক এবং তাঁর সঙ্গে ভোজনকারী মিসরীয়দের জন্য পৃথক পরিবেশন করা হল, কেননা ইবরানীদের সঙ্গে মিসরীয়েরা আহার করে না; কারণ তা মিসরীয়দের ঘৃণিত কর্ম।
33. আর তাঁরা ইউসুফের সম্মুখে জ্যেষ্ঠ জ্যেষ্ঠের স্থানে ও কনিষ্ঠ কনিষ্ঠের স্থানে বসলেন; তখন তাঁরা পরস্পর আশ্চর্য জ্ঞান করলেন।
34. আর তিনি তাঁর সম্মুখ থেকে খাদ্যের অংশ তুলে তাঁদেরকে পরিবেশন করালেন; কিন্তু সকলের অংশ থেকে বিন্ইয়ামীনের অংশ পাঁচ গুণ বেশি ছিল। পরে তাঁরা পান করলেন ও তাঁর সঙ্গে হৃষ্টচিত্ত হলেন।